গ্রামীণফোন বাংলাদেশের একটি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। যা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করে থাকে। গ্রামীণফোন নরওয়েভিত্তিক কোম্পানি টেলিনর এর একটি জিএসএম ভিত্তিক নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এবং ইকবাল কাদির গ্রামীণফোন যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। নরওয়ের টেলিনর কোম্পানিটি গ্রামীণফোনের ৫৫.৮% শেয়ারের মালিক। নরওয়ের সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগ সেবাপ্রদানকারী কোম্পানি টেলিনর, যা বিশ্বজুড়ে ১২টি দেশে মোবাইল সেবা দিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণফোনের বাকি ৩৪.২% শেয়ারের অংশীদার গ্রামীণ টেলিকম। এছাড়া অন্যান্য সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রামীণফোনের বাকি ১০% শেয়ারের অংশীদার। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের অন্যতম মোবাইল ফোন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণফোন মোবাইল ফোন সংক্রান্ত সকল ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। গ্রামীণফোন এসএমএস বা লিখিত খুদেবার্তা, ভয়েস এসএমএস বা কথা বলা খুদেবার্তা, পুশ-পুল সার্ভিস ভিএমএস এবং ইন্টারনেট পরিষেবা ওয়েলকাম টিউন, রিং ব্যাক টন, মিসড কল এলার্ট, কল ব্লক, প্রকৃতির সেবা প্রদান করে থাকে। গ্রামীণফোন দুইটি নাম্বার ক্রমিকে সেবা প্রদান করে থাকে তাহলে- +৮৮০১৭******** ও +৮৮০১৩******** । থ্রিজি ও ফোরজি বা চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট (তার বিহীন ব্রডব্যান্ড )সেবা চালু আছে গ্রামীণফোনে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংক মোবাইল টেলিফোনের লাইসেন্স নেওয়ার প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম নামের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়। যখন গ্রামীণ ব্যাংক মোবাইল টেলিফোনের লাইসেন্স নেওয়ার উদ্যোগ নেয় তখন গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী হন ইকবাল কাদির। ইকবাল কাদির গণফোন ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন । গ্রামীন টেলিকম, গণ ফোন, ও টেলিনর ১৯৯৫ সালে যৌথ সংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনুমতিপত্রের আবেদন করে । গ্রামীণফোন ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে অনুমতি পায়। গ্রামীণফোন ১৯৯৭ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা বোর্ড ১৯৯৪ সালে গ্রামীণফোন নামের একটি পৃথক "নট ফর প্রফিট" কোম্পানি স্থাপন করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। ১৯৯৫ সালে গ্রামীণ টেলিকমকে সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। ১৯৯৮ সালে সরস ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ধান্য থেকে ১০.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দীর্ঘমেয়াদে ঋণ গ্রহণ করে।
গ্রামীণফোন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটর। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সব জায়গায় উন্নতমানের সেবা প্রদান করে থাকে গ্রামীণফোন। বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। বর্তমানে গ্রামীণফোন ৪জি নেটওয়ার্কের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে তারা ৪জি সেবা চালু করে। ২০২২ সালে "পরিবেশবান্ধব ডিজিটাল সিমের এখনই সময় " স্লোগানে গ্রামীণফোন বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো গ্রাহকদের জন্য এমবেডেড সিম ( ই-সিম ) সামনে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপ যা দর্শকদের কাছে সরাসরি টিভি দেখা এবং বিশেষ ভিডিও প্রদান করে। বায়োস্কোপ যৌথভাবে গ্রামীণফোন লিমিটেড ও বঙ্গবিডির মালিকানাধীন। গ্রামীণফোন বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজারের ৫০ শতাংশের বেশি দখল করে আছে। ২০১৭ সালে গ্রামীণফোনের মোট আয় ১২৮৪৩ কোটি টাকা এবং নীট আয় ২৭৪২৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে গ্রামীণফোনের মোট আয় ১২৮৪৩ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে গ্রামীণফোন, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। গ্রামীণফোন আমাদের দেশের অনেক জনপ্রিয় একটি মোবাইল ফোন অপারেটর হলেও এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে এবং নানা সময় প্রবল সমালোচনা সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদেরকে। অপারেটর পরিবর্তন সেবা চালুর পর সবচেয়ে বেশি গ্রামীণফোন গ্রাহক অপারেটর পরিবর্তন করেছে। অন্য অপারেটর এর তুলনায় ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার খরচ অনেক বেশি নেওয়া হলেও দাম সেবার খারাপ মান অযথা অনুমতি ব্যতীত সেবা চালু করে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে গ্রামীণফোন ত্যাগ করেছে।
Comments
Post a Comment